মানুষের জীবনে স্ত্রী অত্যন্ত বিশ্বস্ত বন্ধু। সুখ-দুঃখের সঙ্গী। পুণ্যবতী স্ত্রী পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সমগ্র পৃথিবী মানুষের ভোগ্যবস্তু (নিয়ামত) আর পৃথিবীর ভোগ্যবস্তুগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম হলো পুণ্যবতী স্ত্রী।’ -সুনানে নাসায়ি : ৩২৩২
তাই তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা উচিত। তাদের সাধ্যমতো সময় দেওয়া উচিত। সম্ভব হলে পারিবারিক কাজে সহযোগিতা করা উচিত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ব্যক্তিজীবনে অবসর সময়ে পরিবারবর্গকে পারিবারিক কাজে সহায়তা করতেন। ব্যক্তিগত কাজে তিনি অন্যের সহযোগিতা খুব কমই নিতেন। নিজের কাজ নিজেই করতেন। এ ব্যাপারে হজরত আসওয়াদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা হজরত আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে হজরত রাসুল (সা.) ঘরের মধ্যে কী কাজ করতেন? উত্তরে তিনি বলেন, তিনি ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকতেন, অর্থাৎ গৃহস্থালি কাজে পরিবার-পরিজনের সহযোগিতায় থাকতেন। যখন নামাজের সময় হতো, নামাজে চলে যেতেন। -সহিহ বোখারি : ৬৭৬
উভয় জাহানের বাদশাহ সত্ত্বেও হজরত রাসুল (সা.) যে কতটা নমনীয় ছিলেন এবং কত সাধারণ কাজও স্বহস্তে করেছেন, বিভিন্ন হাদিসের স্বর্ণখচিত শব্দে তার বিস্তর ধারণা পাওয়া যায়।
পরিবারের প্রতিটি কাজই আমাদের নিজেদের কাজ, যা আমরা ভাগাভাগি করে করলে একদিকে যেমন পরিবারের সবার মধ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা, ভালোবাসা বজায় থাকবে, অন্যদিকে রাসুল (সা.)-এর একটি বিশাল সুন্নতও উজ্জীবিত হবে, যা আমাদের সমাজ-সংসার থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে। তা ছাড়া সুন্নতের নিয়তে পরিবার কেন, যে কারও খিদমত করলেই সার্বক্ষণিক সওয়াব লিপিবদ্ধ হতে থাকে।
কোনো অবস্থায়ই স্ত্রীদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করা উচিত নয়। তাদের শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এর ফলে একদিকে যেমন নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে, অন্যদিকে তা পরিবার, সন্তানাদি এবং অর্থনীতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্র্তৃক পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৮৭ শতাংশ নারী স্বামীর মাধ্যমে কোনো না কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার হন। অথচ এটি ইসলামের শিক্ষা নয়। মুমিনের উচিত পারিবারিক জীবনেও রাসুল (সা.)-এর আদর্শকে আঁকড়ে ধরা। প্রিয় নবী (সা.) কখনো কোনো নারীর গায়ে হাত তোলেননি। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) কখনো তার কোনো খাদেমকে অথবা তার কোনো স্ত্রীকে মারধর করেননি এবং নিজ হাতে অপর কাউকেও প্রহার করেননি। -ইবনে মাজাহ : ১৯৮৪
অন্য বর্ণনায় আছে, হজরত রাসুল (সা.) তার স্বহস্তে কোনো দিন কাউকে আঘাত করেননি, কোনো নারীকেও না, সেবককেও না, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ ছাড়া। আর যে তার সঙ্গে অসদাচরণ করেছে, তার থেকেও প্রতিশোধ নেননি। তবে আল্লাহর মর্যাদা ক্ষুণœ হয় এমন বিষয়ে তিনি তার প্রতিশোধ নিয়েছেন। -সহিহ মুসলিম : ৫৯৪৪
📝লেখক: সাআদ তাশফিন